নগরীর সড়কে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আর একটি অ্যাপের মাধ্যমে চালককে শনাক্ত করে অটোরিকশায় যাত্রীদের ফেলে যাওয়া টাকা, গয়না, ল্যাপটপ, ক্যামেরাসহ নানা জিনিস উদ্ধার করছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ- সিএমপি। খবর বিডিনিউজের।

‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ সেবা এবং ‘আইজ অব সিএমপি’ কার্যক্রমের আওতায় সড়কে বসানো সিসিটিভির সহায়তায় গত ১২ দিনে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন যাত্রীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মালামাল।

বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে গত ৩১ জানুয়ারি সকালে সঙ্গে থাকা টাকাভর্তি একটি প্যাকেট ভুল করে অটোরিকশায় রেখে নেমে যান বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা সত্যজিৎ দাশ। পরে তিনি ডবলমুরিং থানায় একটি জিডি করেন।

অ্যাপের মাধ্যমে অটোরিকশায় ফেলে যাওয়া সেই টাকার প্যাকেট উদ্ধার করে শনিবার তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

অটোরিকশার সন্ধানকারী ডবলমুরিং থানার এসআই আইয়ুব উদ্দিন জানান, সত্যজিতের জিডি তদন্ত করতে গিয়ে অন্তত ৫০টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে অটোরিকশাটি শনাক্ত করা হয়।

একইভাবে শুক্রবার রাতে মুরাদপুর এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে অটোরিকশায় সোনার গয়নার একটি বাক্স ফেলে যান দিলীপ বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তি।

কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে তার মনে পড়ে উপহারের জন্য নিয়ে যাওয়া অলঙ্কারের বাক্সটি ফেলে এসেছেন অটোরিকশায়। দ্রুত বিয়ের আসর থেকে বের হয়ে বিষয়টি জানান সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টকে।

বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে খুঁজে বের করা হয় অটোরিকশাটি। আর অটোরিকশায় ফেলে আসা অলঙ্কারের বাক্সটি বুঝিয়ে দেওয়া হয় মালিককে।

এর আগে রহিম উল্লাহ শাহ রুবেল নামে এক ব্যক্তি ৪ ফেব্রুয়ারি অটোরিকশায় ফেলে যাওয়া ক্যামেরা, ল্যাপটপসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ফিরে পান গত বৃহস্পতিবার।

এ ছাড়া গত ২৭ জানুয়ারি সাদিক সালমান নামে এক ব্যক্তি তাঁর বোনের সঙ্গে বাসায় যাওয়ার সময় ভুলবশত ব্যাগ এবং পাসপোর্ট অটোরিকশায় রেখে নেমে যান।

বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশকে দেওয়ার পর ‘আমার গাড়ি নিরাপদ সেবার’ মাধ্যমে চালককে খুঁজে বের করে ৩১ জানুয়ারি তাঁদের মালামাল ফিরিয়ে দেন ট্রাফিক পুলিশের উত্তর বিভাগের সদস্যরা।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন জানান, ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ সেবার আওতায় চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচলরত অটোরিকশাগুলো নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে। আর নিবন্ধিত অটোরিকশাগুলোতে কিউআর কোডসংবলিত স্টিকার লাগানো হচ্ছে। যেকোনো যাত্রী তাঁর মোবাইল ফোন থেকে অটোরিকশার চালক-মালিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সেটিতে ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে যাত্রীরা ভুল করে অটোরিকশায় তাঁদের প্রয়োজনীয় মালামাল ফেলে আসার ঘটনা ঘটে। যেগুলো আগে বেশির ভাগ সময় খুঁজে পাওয়া যেত না। কিন্তু ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ সেবার আওতায় অটোরিকশার ডেটাবেইস থাকার কারণে কোনো যাত্রী তাঁর মূল্যবান জিনিসপত্র অটোরিকশায় ফেলে গেলে সেগুলো খুঁজে পাচ্ছেন।‘

চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচল করা প্রায় ১৩ হাজার অটোরিকশাকে এক তথ্যভাণ্ডারের আওতায় আনতে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর থেকে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ নামে একটি ডেটাবেইস তৈরির কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।

তার আগে নভেম্বর মাসে ‘আই’জ অব সিএমপি’ নামে নগরজুড়ে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করে সিএমপি। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি স্থানে ৪১১টি ক্যামেরা বসিয়ে সেগুলো সিএমপি সদর দপ্তরের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অটোরিকশার মালিকেরা জাতীয় পরিচয়পত্র, অটোরিকশার নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিটের কাগজ দিয়ে নির্ধারিত ফরম পূরণ করবেন।

আর চালকেরা জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স, অটোরিকশার তথ্যসহ ফরম পূরণ করে নিবন্ধন করে রাখবেন। এসব তথ্য সিএমপির সার্ভারে জমা থাকবে।

নিবন্ধনের পর অটোরিকশার সামনে কিউআর কোডসংবলিত একটি স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর চালকদের দেওয়া হচ্ছে একটি নিউমেরিক কোড সংবলিত আইডি কার্ড। সেটা যাত্রীর আসনের সামনে টাঙিয়ে রাখতে হয়।

যেকোনো যাত্রী অটোরিকশায় যাতায়াতের আগে তাঁর মোবাইল ফোন থেকে চালক এবং মালিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারেন।