
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক এবং গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া বাংলাদেশ পুলিশের মহতী উদ্যোগ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ১০ এপ্রিল (রোববার) ভার্চ্যুয়ালি থানায় থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক ও গৃহহীনদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের নির্মিত গৃহ হস্তান্তরের উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস প্রান্ত থেকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আক্তার হোসেনসহ বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনস, পীরগঞ্জ থানা এবং মাগুরা সদর থানা সরাসরি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের সব থানা ও সব পুলিশ লাইনস প্রান্ত ওয়ানওয়ে সংযুক্ত থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছে।
অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণ করা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, জাতীয় চার নেতা, করোনা মহামারিতে দায়িত্ব পালন করার সময় জীবন উৎসর্গ করা পুলিশ সদস্যদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর বাংলাদেশের সব অগ্রযাত্রা থেমে গিয়েছিল। স্বাধীনতার আদর্শ থেকে বাংলাদেশ বিচ্যুত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ আবার তার পথে ফেরে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ঘোষণা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে পুলিশ গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় ৫১৯টি থানায় ৫২০টি গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কাল ৪০০টি গৃহ হস্তান্তর করা হবে। ৪১৫ বর্গফুট আয়তনের দৃষ্টিনন্দন প্রতিটি গৃহ পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
গৃহহীন পরিবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, প্রতিবন্ধী ও উপার্জনে অক্ষম, অতিবৃদ্ধ ও পরিবারে উপার্জনক্ষম সদস্য নেই, এমন পরিবার অথবা অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে বছরব্যাপী নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল পুলিশ। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সেসব পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় কিছু অর্থ বেঁচে যায়। সেই অর্থ দিয়ে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আবাসন কার্যক্রমে শামিল হয় বাংলাদেশ পুলিশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি থানায় স্থাপন করা হয়েছে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক। দেশের ৬৫৯টি থানায় একটি বিশেষ কক্ষ নির্মাণ অথবা প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সার্ভিস ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। সার্ভিস ডেস্ক কর্মকর্তা থানায় আগত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা মনোযোগসহকারে শুনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করে থাকেন।
মুজিববর্ষের সূচনালগ্ন ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সার্ভিস ডেস্ক পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৭৬ জন নারী, ৩২ হাজার ২৮৬ জন শিশু, ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩২৫ জন পুরুষ এবং ১১ হাজার ৮১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, মোট ৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৬৮ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে এই ডেস্ক থেকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে পুলিশের অবদান অনেক বেশি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের আক্রমণই শুরু হয়েছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। বাঙালি পুলিশ সদস্যরা অকুতোভয় প্রতিরোধ গড়েছিলেন সে সময়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা প্রতিটি থানায় পৌঁছার পর বাংলাদেশ পুলিশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়। জাতির পিতার যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, বাংলাদেশ পুলিশ হবে জনগণের পুলিশ, সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের সেবক হবে, পুলিশের কাছে গেলে যে ন্যায়বিচার পাবে, সেই আত্মবিশ্বাসটা মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা এই সমাজটাকে উন্নত করতে চাই। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসহায় মানুষকে আইনি সেবা দিতে তাঁর সরকারের গঠন করা লিগ্যাল এইডের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন শুরু করেছি। সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায়, সে লক্ষ্যেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য ছিল, যে কাজ জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, তিনি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প দিয়ে কাজটা শুরু করেছিলেন। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে একজন মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। এর সুফল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। নারী, শিশু, বয়স্ক প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্ভিস ডেস্কের জন্য এবং গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য পুলিশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ সময় সততার সঙ্গে কাজ করে যেতে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম রেঞ্জ, রংপুর রেঞ্জে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছিল, ঠিক সেই সময়ই বঙ্গবন্ধুকে শাহাদত বরণ করতে হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের চাকা সচল হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ এখন উন্নয়নের অগ্রগতির সুফল ভোগ করছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশ প্রতিটি থানায় গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ শুরু করে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ আরেকটি মানবিক কাজ করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু গণমানুষের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চেতনার দর্শনের রূপকল্প রক্ষা করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া মানুষেরা নিঃসঙ্কোচে পুলিশের সার্ভিস ডেস্ক ব্যবহার করতে পারবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের এই চাকা আরও গতিশীল করতে বাংলাদেশ পুলিশ গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আমাদের সমাজেরই অভিন্নজন। তাদের উন্নয়নের মূলধারায় আনার কোনো বিকল্প নেই। তাদের জন্য থানায় থানায় গড়া সার্ভিস ডেস্কে কাজ করছেন প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যরা। এতে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সহজতর হচ্ছে। বাংলাদেশেল জনগণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মার আপনজন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তাঁর একমাত্র ব্রত।
বঙ্গবন্ধুর উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ভূমিহীন, ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন শুরু করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ৫২০টি থানায় গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এসব গৃহ উন্নত ও পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আজ ৪০০টি গৃহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।