স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ (ডিবি)। খবর ডিএমপি নিউজের।
গ্রেপ্তার দুই আসামির নাম মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে বাপ্পী ও এ এস এম জোবায়ের। তাঁদের হেফাজত থেকে দুটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি ফ্যাক্সো সিল, তিনটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়রে অ্যাডমিনের সিল, মন্ত্রণালয়ের লোগোসংবলিত আইডি কার্ড, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ছয়টি নিয়োগপত্র, ভিজিটিং কার্ড, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাড়ির স্টিকার এবং উত্তরা ব্যাংক যশোর শাখার একটি চেক বই, মন্ত্রণালয়ের সার্ভিস আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, স্টিকার ও সিল উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপির কোতোয়ালি থানার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় ১৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবি লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন দাস জানান, ভুক্তভোগী এম এম নিজাম উদ্দিনের বাড়ি এবং মো. জহিরুল ইসলামের শ্বশুরবাড়ি একই এলাকায়। ৫-৬ মাস পূর্বে বাপ্পী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পার্সোনাল কাউন্সিলর পদে চাকরি পেয়েছে বলে তাঁর শ্বশুরবাড়ির এলাকায় প্রচার করে। বাপ্পী তাঁর শ্বশুরবাড়ির এলাকার মসজিদে এ জন্য দোয়া মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। তা ছাড়া তাঁর শ্বশুরবাড়ির এলাকার এতিমখানায় দান-খয়রাত করেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে বাপ্পী পদোন্নতি পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিফ অডিট অফিসার হয়েছেন বলেও তাঁর শ্বশুরবাড়ির এলাকার প্রচার করেন।
এর কিছুদিন পর নিজাম উদ্দিন তাঁর ছেলে ও ভাগ্নের চাকরির জন্য বাপ্পীর সাথে আলোচনা করেন। বাপ্পী নিজাম উদ্দিনের ছেলেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অডিট অফিসার এবং তাঁর ভাগ্নেকে খাদ্য অধিদপ্তরের স্টোরকিপার পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং বিনিময়ে ১৬ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে নিজাম উদ্দিন তাঁর ছেলে ও ভাগ্নের চাকরির জন্য বিভিন্ন তারিখে বাপ্পীকে মোট ১১ লাখ টাকা প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ের গেটে বাপ্পী ও জোবায়ের ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিনকে তাঁর ছেলে অডিট অফিসার ও তাঁর ভাগ্নের খাদ্য অধিদপ্তরের স্টোরকিপার পদে চাকরির দুটি নিয়োগপত্র প্রদান করেন। নিজাম উদ্দিন নিয়োগপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখেন, সেগুলো ভুয়া। নিজাম উদ্দিন আরও যাচাই-বাছাই করে জানতে পারেন যে, বাপ্পী ও জোবায়ের কেউই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন না।
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অফিসার ইনর্চাজ পল্লবী থানা একটি প্রতারণার মামলা করেন। গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ মামলাটি তদন্তের ভার পায় এবং বাপ্পী ও জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সর্ম্পকে সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন দাস বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা নিজেদের বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাকরি ও বিভিন্ন তদবিরের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে।