সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে হুমকি, ভয় দেখানো ও চাঁদা দাবির অভিযোগে দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানার সদস্যরা।
শনিবার (১১ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বিপিএম (বার), পিপিএম জানান, গতকাল শুক্রবার (১০ মে) নীলফামারীর পাঁচরাস্তা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিরা হলেন নীলফামারী সদর থানা এলাকার মো. মনোয়ার হোসেন ওরফে বাবু (৪৫) ও মো. শাহজালাল (৩৩)। মনোয়ারের বিরুদ্ধে চারটি ও শাহজালালের বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। তাঁরা প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য।
কেএমপি কমিশনার জানান, গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতার খুলনা শাখার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. সাঈদুজ্জামানকে (৩১) বেতারের সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করেন এক ব্যক্তি। এ সময় বর্তমান কর্মস্থল থেকে বদলি করার হুমকি দেন এবং বদলির তালিকা থেকে নাম কাটাতে টাকা দাবি করেন। এ ছাড়া বেতার খুলনা উপকেন্দ্রের ৯ জন এবং খুলনার পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শকের কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে একই কায়দায় টাকা দাবি করেন। এপর্যায়ে পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক এ এম আক্তার হোসেনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় মামলা করেন ভুক্তভোগী সাঈদুজ্জামান। তদন্তের একপর্যায়ে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর নীলফামারী সদর থানা-পুলিশের সহায়তায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কেএমপি কমিশনার জানান, সরকারি আমলা, রাজনীতিক, বিভিন্ন বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করতেন আসামিরা। সরকারি তথ্য বাতায়ন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পত্রিকার বিজ্ঞাপন ও ভিজিটিং কার্ড থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফোন করে কখনো ভয়ভীতি, আবার কখনো প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
তিনি আরও জানান, উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ফেনীতে বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতেন আসামি মনোয়ার। ওই চাকরি ছেড়ে ২০০৮ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে চলে আসেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। তখন থেকেই শুরু হয় মনোয়ারের প্রতারণার খেলা। প্রথমে নিজের এলাকার লোকজনকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন। এরপর শুরু করেন বিকাশের নামে প্রতারণা। একপর্যায়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অপর আসামি শাহজালাল। এরপর দুজনে মিলে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন।
কেএমপি কমিশনার জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কি না, তার তদন্ত চলছে।