র‍্যাবের হেফাজতে গ্রেপ্তার আসামি। ছবি: জাগো নিউজের।

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্ত্রী রিনা বেগমসহ তাঁর পরকীয়া প্রেমিক ইউসুফকে হত্যার দায়ে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইব্রাহিম খলিলকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

আজ মঙ্গলবার ভোররাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানাধীন তকিরহাট এলাকা থেকে র‍্যাব-১১-এর একটি আভিযানিক দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে। রায় দেওয়ার সাড়ে সাত মাস পর তিনি গ্রেপ্তার হলেন। খবর কালের কণ্ঠের।

র‍্যাব-১১-এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান জানান, জোড়া খুনের ঘটনায় ইব্রাহিমকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। আমরা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁকে রামগতি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

ইব্রাহিম রামগতি উপজেলার চরলক্ষ্মী গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ইউসুফসহ স্ত্রী রিনাকে ছুরি দিয়ে ইব্রাহিম হত্যা করেন। আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। তবে রায়ের সময় আসামি পলাতক ছিলেন।

আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইব্রাহিম ফেনীর একটি ইটভাটার মাঝি ছিলেন। রামগতি চরলক্ষ্মী গ্রামের বেলাল মাঝির ছেলে ইউসুফ তাঁর সঙ্গে ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

এতে প্রায়ই ইউসুফ তাঁর বাড়িতে যেতেন। একপর্যায়ে ইব্রাহিমের স্ত্রী রিনার সঙ্গে ইউসুফের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৭ সালের ৩ জুন ইফতারের সময় ইউসুফ ওই বাড়িতে যান। এর প্রায় ১৫ দিন আগে ইউসুফ কাজ থেকে চলে আসেন। পরে তিনি এলাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ফেনী থেকে ইব্রাহিম বাড়িতে এসে রিনা ও ইউসুফকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইব্রাহিম দুজনকেই ঘরে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন। ইউসুফকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ইউসুফকে হত্যার ঘটনায় পরদিন তাঁর স্ত্রী তছলিমা বেগম বাদী হয়ে রামগতি থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ছাড়া আহত অবস্থায় রিনাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৬ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে রিনা মারা যান। পরে নোয়াখালীর সুধারাম থানায় নিহতের মা জানু বেগম একটি জিডি করেন। এদিকে, একই ঘটনায় দুটি হত্যা হওয়ায় ১১ জুন মামলাটি রামগতি থানার মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার ইব্রাহিমকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে তিনি জবানবন্দি দেন। একই বছরের ১২ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগতি থানার উপপরিদর্শক ফরিদ আহম্মদ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত ইব্রাহিমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।