মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ। ছবি: বাসস

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশ হওয়ায় এই পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। খবর বাসসের।

বুধবার প্যারিসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে এই আহ্বান জানানো হয়।

এ ব্যাপারে ফ্রান্স আশ্বাস দিয়ে বলেছে, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ, দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সসহ উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে ফ্রান্সের নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমরা আন্তরিকভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকব।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন ফ্রান্সে অবস্থান করছেন।

মোমেন বলেন, ফ্রান্সের সব নেতার সঙ্গে বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালে রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের নেতাদের অবহিত করা হয় যে, বাংলাদেশ এই সংকটের সমাধানে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনকি আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিটি) গিয়েছি।’

মিয়ানমার এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং এর সমাধানও তাদের হাতে রয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা শাসকদের সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনা করেনি।

মোমেন বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সের নেতাদের বলেছি, পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রশ্ন, সামরিক সরকার চলাকালে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য সংলাপের ব্যাপারে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে কি না। আমরা তাদের বলেছি যে ১৯৭০ ও ১৯৯০-এর দশকে মিয়ানমারে সামরিক সরকার ছিল। কিন্তু ওই সময় তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করেছে।

এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৯২ সালে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে এবং তাদের মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার জনকে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয় এবং ১৯৭০-এর দশকেও একই কাজ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সকে বলেছি যে, চার বছর ধরে দেশটির রাখাইন রাজ্যে কোনো সংঘাত ঘটেনি। এখানে কোনো সহিংসতা হয়নি। কাজেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর এখন উপযুক্ত সময়।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অবহিত করেছে যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে।

মোমেন আরও বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত আছে। তারা বলেছে, তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মর্যাদাসহকারে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত আসার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারেও তারা রাজি রয়েছে। তবে তারা কোনো কিছু বাস্তবায়ন করছে না। আমরা আমাদের কষ্টের কথা বলেছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্সের নেতারা বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুর ব্যাপারে আসিয়ানকে কিছু জানানো হয়েছে কি না।

তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তরে বলেছি, অবশ্যই, আমরা আসিয়ানকে জানিয়েছি। ফ্রান্স বলেছে, তারা আসিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা আসিয়ানকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।’

মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে আসিয়ানের ধী গতি লক্ষ করা যাচ্ছে এবং সংস্থাটি কোনো সদস্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোনো কিছু বলতে পারে না।

ড. মোমেন আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্রান্সের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ এই ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফ্রান্সের নেতাদের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।