বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স) প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়েছে দেশ। ২০২১ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। অন্যদিকে পাকিস্তানের অবস্থান ৯২তম ও ভারতের ১০১তম।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এমনকি নেপালের মতো দেশও। সর্বশেষ এই সূচকে মিয়ানমার রয়েছে ৭১ নম্বরে, নেপাল ও বাংলাদেশ যৌথভাবে ৭৬ নম্বর স্থানে এবং পাকিস্তান রয়েছে ৯২ নম্বরে। খবর ঢাকা পোস্টের।
অবশ্য ২০২০ সালের ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম। সেই হিসেবে চলতি বছর বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া নেপালও যৌথভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ৭৬ নম্বরে রয়েছে।
এদিকে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে আরও নিচে নেমে গেছে ভারত। সর্বশেষ প্রকাশিত রিপোর্টে সাত ধাপ অবনতি হয়েছে দেশটির। ২০২১ সালে বিশ্বের ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১০১তম। ২০২০ সালে দেশটি এই তালিকার ৯৪ নম্বরে ছিল। বৃহস্পতিবার এ বছরের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের ক্রমতালিকা প্রকাশিত হয়।
প্রতিবছর আয়ারল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ এবং জার্মান সংস্থা ‘ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ’ যৌথভাবে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ক্ষুধার পরিমাণ নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে যেকোনো দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থান, শিশু স্বাস্থ্য এবং সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো।
মূলত চারটি বিষয় সামনে রেখে তৈরি হয় গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই)-র এই সূচক। এগুলো হলো অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা, মৃত্যুহার, উচ্চতার তুলনায় ওজন। তবে সামগ্রিকভাবে ভারতের অবস্থান হতাশাজনক হলেও পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুহার কিংবা অপুষ্টির হারে আগের থেকে উন্নতি করেছে দেশটি।
২০২১ সালের তালিকায় ভারতের স্থান গতবারের চেয়ে ৭ ধাপ নেমে হয়েছে ১০১তম। তালিকা প্রস্তুতকারীরা একে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্ব ক্ষুধার ক্রমতালিকায় ভারতের পেছনে রয়েছে পাপুয়া নিউগিনি, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মোজাম্বিক, ইয়েমেন, সোমালিয়ার মতো ১৫টি দেশ।
২০২০ সালে ১০৭টি দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষুধার সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেবার ভারত ছিল ৯৪ নম্বরে। ভারতের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বা জিএইচআই স্কোরের ধারাবাহিকভাবে পতন হচ্ছে। ২০০০ সালে ভারতের জিএইচআই স্কোর ছিল ৩৮ দশমিক ৮, সেখানে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতের স্কোর কমে ২৮ দশমিক ৮ থেকে ২৭ দশমিক ৫-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
অবশ্য বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের এই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে চীন, ব্রাজিল, কুয়েতের মতো ১৮টি দেশ। এসব দেশের জিএইচআই স্কোর ৫-এরও নিচে রয়েছে।
বর্তমান জিএইচআইয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধার হার কমিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না বিশ্বের ৪৭টি দেশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দিক থেকে খাদ্যনিরাপত্তা ব্যাহত হয়েছে। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সংঘর্ষ, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনাভাইরাস মহামারি-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ।