
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁর স্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত হলো ‘মুজিব কর্নার’। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল ১০ জানুয়ারি সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে ‘মুজিব কর্নার’ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার), পিপিএম।
বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান পিপিএম (বার) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। মনে পড়ে সেই ৭ মার্চের ভাষণ। মার্চের প্রতিটি দিনের কথা আমার মনে পড়ে।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটি জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছিলেন, যখন ব্রিজ, কালভার্ট ও রাস্তাঘাটগুলো মেরামত হলো। একটা ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার যখন বাংলাদেশে প্রাণের সঞ্চার হলো, তখন তাঁকে প্রাণ হারাতে হলো। স্বাধীনতাবিরোধীদের পরামর্শে কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য এ ঘটনা ঘটিয়েছিল।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার দেখার প্রতীক্ষায় ছিলাম। সেটাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করে আমাদের কালিমামুক্ত করেছেন। হৃদয়ে যে ক্ষত ছিল, তার কিছুটা তিনি উপশম করেছেন।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আপনারা এখানে মুজিব কর্নার স্থাপনের আয়োজন করেছেন, সে জন্য আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এটা দেখবে, এরা জানবে।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ডিএমপিতে সুন্দর এক কর্নার করা হয়েছে, এটা খুবই সুচিন্তিত পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। যেন মাকে হারিয়ে ফেলা এক শিশু দীর্ঘ সময় পর মাকে খুঁজে পেয়ে যেভাবে আবেগে আপ্লুত হয়, তেমনি আমরা ক্রন্দন সিক্ত বঙ্গবন্ধুকে দেখি। তিনি বারবার চোখ মুছছেন, তাঁর পাশে জাতীয় চার নেতা রয়েছেন, অন্য নেতৃবৃন্দ রয়েছেন, তাঁদের জড়িয়ে ধরছেন। হিমালয়সদৃশ বিশাল মানুষটি একটি শিশুর মতো মাকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে বিহ্বল হচ্ছেন।
আইজিপি বলেন, ‘ঐতিহাসিক দিন ১০ জানুয়ারি, যেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন থেকে দেশে এসেছেন। তিনি বলেন, তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে রেসকোর্স ময়দানে আসা যেত। কিন্তু তাঁর আসতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। আমরা সেই সময় বাংলাদেশ বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য শুনব বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহবানে প্রথম বুলেট রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে বীর পুলিশ সদস্যগণ নিক্ষেপ করেন। ইতিহাসের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ বাংলাদেশ পুলিশ করেছিল, এটা বাংলাদেশ পুলিশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
আইজিপি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, আগুন-সন্ত্রাসসহ যেকোনো অপপ্রয়াস বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে রুখে দিয়েছে। আগামী দিনেও যেকোনো অপপ্রয়াস রুখে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইজিপি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর এ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। সে জন্য আমরা আজকের এ দিনটিতে মুজিব কর্নার উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রায় ১৩ বছর কারাভোগ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর কন্যার হাত ধরে আজকে বাংলাদেশ অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরা সে দেশের নাগরিক হিসেবে আজ সেই সুফল ভোগ করছি। আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে, মননে সর্বদা মুজিবের আদর্শ বিরাজমান।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি এবং ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।