
জন্ম থেকেই এক হাত আর দুই পা নেই শাহিদা খাতুনের। তবে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তাঁর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। লেখাপড়া করেছেন, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, এক হাতেই হস্তশিল্প ও সেলাইসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন। হার না মানা শাহিদার পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা। তাঁর উদ্যোগে চাকরি পেয়েছেন শাহিদা।
শাহিদার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। মুদি দোকানি রফিউদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। জন্ম থেকেই এক হাত ও দুই পা নেই তাঁর। এমন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ২০১৫ সালে যশোর সরকারি এম এম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেছেন শাহিদা। উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও চাকরি না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।
শাহিদাকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তা নজরে আসে পুনাক সভানেত্রীর। এরপর তিনি শাহিদার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরই উদ্যোগে যশোরের নওয়াপাড়ায় অবস্থিত আকিজ জুট মিলে এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে চাকরি হয়েছে শাহিদার। যশোর জেলা পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে ২২ মার্চ (মঙ্গলবার) ও ২৩ মার্চ (বুধবার) যশোর যান পুনাক সভানেত্রী। এই সফরের সময়ই ২৩ মার্চ ঝিকরগাছার শিমুলিয়া গ্রামে এক অনুষ্ঠানে শাহিদার হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা।
এর আগে শাহিদার পরিচালিত সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন পুনাক সভানেত্রী। এ সময় প্রতিবন্ধী শিশুদের আদর করেন তিনি। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের খোঁজখবর নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চকলেট, নতুন পোশাক ও বিভিন্ন উপহার তুলে দেন পুনাক সভানেত্রী।
শুধু নিজের প্রতিবন্ধকতা জয় করেই থেমে যাননি শাহিদা। অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্যও এগিয়ে এসেছেন তিনি। বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন এই সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা। সেখানে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা আর নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
নিয়োগপত্র পেয়ে খুশিতে আত্মহারা শাহিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘অবশেষে আমার একটা কর্মসংস্থান হলো। পড়াশোনা শেষ করেও চাকরি না হওয়ায় আমি খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। পুনাক সভানেত্রীর কল্যাণে আমার একটা চাকরি হলো। এখন আমার মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে পারব।’
পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে শাহিদাকে নিয়ে সংবাদ পড়েছি। তার প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন করা আমাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় শাহিদার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে পুনাক। শাহিদার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় পরিবারটি এখন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’