পিবিআইয়ের অভিযানে গ্রেপ্তার আন্তজেলা ইজিবাইক চোর চক্রের সদস্যরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), বাগেরহাট কয়েকটি জেলায় অভিযান চালিয়ে আন্তজেলা ইজিবাইক চোর চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানা এলাকায় এসব অভিযান পরিচালিত হয়।

পিবিআই জানায়, পিরোজপুরের মো. আলম হাওলাদার প্রতিদিনের মতো ৭ ডিসেম্বরও তাঁর ইজিবাইক নিয়ে বের হয়েছিলেন। পিরোজপুরের নাজিরপুর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় মো. বসির উদ্দিন ওরফে সাগর নামের একজন নিজেকে র‍্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আলমের ইজিবাইকে যাত্রী হয়ে ওঠেন। তিনি পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানা এলাকায় বাধাল বাজারের কাছে নির্জন একটি এলাকায় পৌঁছান। সেখানে ওত পেতে থাকা তাঁর সহযোগী বাচ্চু গিয়ে বলেন, আলমের গাড়ি পুলিশ আটক করছে।

এ সময় বাচ্চুকে র‍্যাব কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী বসির উদ্দিন বলেন, ‘তুই আমার কথা বলস নাই। আমি র‍্যাবের অফিসার। আমার লোকের গাড়ি কীভাবে আটকায়? যা কাগজপত্র নিয়া আয়।’ কিছুক্ষণ পর বসির উদ্দিন ইজিবাইক চালক আলমকে বলেন, ‘তুমি একটু ওর বাসায় গিয়ে বলো ও যেন আসার সময় ব্লু-বুক নিয়ে আসে।’ আলম সরল বিশ্বাসে তাঁর ইজিবাইক তালা বন্ধ করে রেখে বাচ্চুর কাছে গেলে চোর চক্রের আরেক সদস্য মহিউদ্দিন মোটরসাইকেল নিয়ে ইজিবাইকচালকের সামনে এসে থামেন। তিনি মোটরসাইকেলের স্টার্ট বন্ধের অভিনয় করে বলেন, ‘ভাই একটু ঠেলা দেন।’ এই সুযোগে চোর চক্রের আরেক সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে চান মিয়া সিকদার ইজিবাইকটি সচল করেন। এরপর মো. ইমরান মোল্যা ওরফে ইমন ইজিবাইকটি চালিয়ে গোপালগঞ্জে চলে যান।

পরে মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে চান মিয়া সিকদার ইজিবাইকটি গোপালগঞ্জে ৬০ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি কিনে চোরাই মালামাল কেনাবেচা চক্রের সদস্য মো. আমির ফকিরের কাছে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। আমির ফকির ইজিবাইকটি মেরামত ও রং পরিবর্তনের জন্য গ্যারেজমিস্ত্রি নূর ইসলামের কাছে দেন।

পিবিআই জানায়, ইজিবাইকের চালক ও মালিক আলম হাওলাদার ইজিবাইক চুরির ঘটনায় কচুয়া থানায় গেলে সেখান থেকে তাঁকে মোরেলগঞ্জ থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পিবিআই বাগেরহাটেও যোগাযোগ করতে বলা হয়। এরপর আলম মোরেলগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন এবং পিবিআই বাগেরহাট অফিসেও যোগাযোগ করেন। পিবিআই বাগেরহাট অভিযোগ পেয়েই ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের অনুমতি পেয়ে মামলাটি শুরু করে পিবিআই বাগেরহাট। এরপর পিবিআইয়ের একটি দল পটুয়াখালীর দশমিনা হতে চোর চক্রের সদস্য মো. আ. কাদেরকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার আ. কাদেরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোরচক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাঁদের কাছ থেকে দুটি ইজিবাইক, চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার ও দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া মো. আমির ফকিরকে ৫০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়, যা তিনি চোরাই ইজিবাইক কেনার উদ্দেশ্যে নিজের কাছে রেখেছিলেন। তাঁর কাছ থেকে আলম হাওলাদারের চুরি হওয়া ইজিবাইকটিও উদ্ধার করা হয়।

মামলার অন্যতম আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে চান মিয়া সিকদার এবং তাঁর দুই সহযোগী সাইফুল ইসলাম ও রসুল আমিন হাওলাদার ওরফে সাগরকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা পিবিআইকে জানান, ইজিবাইকটি তাঁরা নড়াইলের লোহাগড়া থেকে চুরি করেছেন। চালককে জুসের সঙ্গে নেশাজাতীয় ওষুধ মিশিয়ে পান করিয়ে অচেতন করে বাইকটি চুরি করেছেন তাঁরা।