বাংলাদেশে দালাল না ধরলে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগ অনেকের মুখে শোনা যায়। পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে এই দালালদের হাতে হয়রানির শিকারও হন কেউ কেউ। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে এখন দালালদের আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য দালালদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এখন এজেন্টদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিধিমালা তৈরির কাজ করছে মন্ত্রণালয় এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, একজন সাধারণ নাগরিক যাতে হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পেতে পারেন, সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি দালালদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
তিনি বলেছেন, ‘পাসপোর্ট আবেদনকারী অনেকেই নিজের ফরম নিজে পূরণ করতে পারেন না, তাঁর সাহায্য লাগে। অনেকে অনলাইনে ফরম পূরণ করতেও পারে না। তখন দালালদের প্রয়োজন হয় তাঁদের। কিন্তু এখন পর্যন্ত লিগ্যালি কেউ কাজটা করে না। এখন যাতে তারা আইনসিদ্ধভাবে কাজটি করতে পারে, সে জন্য বৈধতা দেওয়ার এ প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি জমিজমা ও সম্পত্তির দলিল লেখকদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও যেহেতু বড় অংশের মানুষের এই সাহায্য প্রয়োজন হচ্ছে, সে কারণে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বিষয়টির বিস্তারিত, যেমন এজেন্টের যোগ্যতা কী হবে বা কারা এজেন্ট হতে পারবে, তা নিয়ে কাজ চলছে।
সেই সঙ্গে পাসপোর্ট এজেন্ট লাইসেন্সিং নামে একটি বিধিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
নতুন ব্যবস্থা ঠিক কবে চালু হবে, তা বলেননি সুরক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেন ।
তবে নতুন ব্যবস্থা চালু হলে সরকারনির্ধারিত যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেতে পারবেন।
একটি নির্ধারিত ফির বিনিময়ে তাঁরা একজন সেবাগ্রহীতাকে পাসপোর্ট ফরম পূরণ, ফরম জমা দেওয়া এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার মতো কাজে সহায়তা করতে পারবেন।
ফলে এজেন্টের মাধ্যমে পাসপোর্টের ফরম পূরণ ও আবেদন করতে সরকারি ফির বাইরে একজন গ্রাহককে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, ওই ফি সবার জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। তিনি বলেন, ‘কারণ, যিনি সাহায্য নেবেন, কেবল তিনিই ওই ফি দেবেন।’
বাংলাদেশে বহু মানুষ পাসপোর্ট ফরম পূরণ, ফরম জমা দিয়ে ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিকের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার মতো সাধারণ এবং অত্যাবশ্যকীয় কাজের জন্য দালালের সহায়তা নেন।
আবার এই পাসপোর্ট করতে গিয়ে তাঁদের অনেকে ভোগান্তির শিকার হন এমন অভিযোগও শোনা যায়। আর এ ক্ষেত্রে অভিবাসী শ্রমিকেরাই বেশি ভুক্তভোগী হন।
এ ধরনের ঘটনা আগারগাঁওয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব জেলাতেই থাকা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে।
যে কারণে পাসপোর্ট অফিসগুলো ঘিরে দালাল চক্রের হয়রানি ঠেকাতে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানও চালায়। কিন্তু দালাল নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে দালালদের কাজের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা যাবে।
কারণ, এখন দালালদের বৈধতা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অনেক সময়ই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।