মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোগান্তি নিরসনে অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা নিয়ে বিরোধের অবসান হওয়া দরকার। তিনি বলেন, “আমরা ভাটিতে আছি, ভারত থেকে পানি আসছে। তাই ভারতের উচিত আরও উদারতা দেখানো। এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। মাঝে মধ্যে আমাদের দেশের মানুষ, বিশেষ করে তিস্তা নদীর কারণে অনেক কষ্টে থাকে। আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) এর সমাধান করতে খুব আগ্রহী; কিন্তু সমস্যাটি ভারতের ভেতরে।”
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা শুধু গঙ্গার পানির হিস্যা পাই; কিন্তু আমাদের আরও ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা, এর সমাধান হওয়া দরকার।”
সোমবার থেকে চার দিনের সফরে ভারতে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। পাশাপাশি ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকারের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছিল।
মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি। ফলে দুই দেশের মধ্যে গত এক যুগে অধিকাংশ বৈঠকের আগেই তিস্তার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে।
অগাস্টের শেষে দিল্লিতে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হয়। পাশাপাশি ২০১৯ সালের সমঝোতা স্মারকের আলোকে ফেনী নদীর যে অংশ থেকে ত্রিপুরার সাব্রুমের জন্য পানি নেওয়া হবে, তার স্থান নির্ধারণ ও নকশা চূড়ান্ত করা হয় ওই বৈঠকে।
ওই বৈঠকে তিস্তা চুক্তি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে ২৮ অগাস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা এ চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ আবারও অনুরোধ জানিয়েছে বৈঠকে।অন্যদিকে ভারত এ চুক্তি শেষ করতে ‘সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে।
সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারীর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারত সফর করেছিলেন শেখ হাসিনা। তার এবারের সফরে কুশিয়ারার পানি বণ্টনসহ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তিস্তার কোনো অগ্রগতির কথা সরকারের কর্মকর্তাদের কথায় আসেনি।
এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কয়েক বছর ভারতে নির্বাচিত জীবন কাটানোর কথাও তিনি স্মরণ করেন।
চীনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক নিয়ে এএনআই এর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব স্পষ্ট…‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে সেটা ভারত আর চীনের মধ্যে। আমি সেখানে নাক গলাতে চাই না।”
তবে দুই দেশের মধ্যে যে কোনো সমস্যার সমাধানে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ হাসিনা।
“পাশাপাশি থাকলে কিছু সমস্যা হতে পারে, অথবা আগে থেকেই থাকতে পারে, সেগুলোর সমাধানও আমরা করতে পারি। কিছু বিষয় এখনও আমাদের রয়েছে, আমি মনে করি, আমরা সংলাপ চালিয়ে যাব।
“উন্নয়নের জন্য সব দেশের সহযোগিতাই আমাদের প্রয়োজন, আমাদের জন্য যেটা উপযুক্ত হয়।”
করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে ভারতের ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ কর্মসূচির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।