নাতি হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দাদা আবুল কাশেম হাওলাদার (মাঝে)। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

বরিশালের মুরাদ থানায় বাগানের নারকেল ও লেবু তোলার সন্দেহে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া নাতিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দাদাকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি পুলিশ।

গত ২৮ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টায় মুলাদী থানাধীন জালালাবাদ এলাকায় কাশেম হাওলাদারের বাড়িতে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।

ভিকটিম জিসান (১৭) মালয়েশিয়াপ্রবাসী নজরুল ইসলাম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে এবং লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

নাতিকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়।

এ ঘটনার পরপরই বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার)-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে আবুল কাশেম হাওলাদারের (৬৬) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

এরপর এলআইসির একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে গতকাল সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানা এলাকা থেকে আসামি আবুল কাশেম হাওলাদারকে (৬৬) গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ২ বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা যান। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলে নজরুল ইসলাম হাওলাদার প্রায় ১৩ বছর ধরে মালয়েশিয়াপ্রবাসী। ছোট ছেলে আজিজুল কৃষিকাজ করেন। তিনি তাঁর ছোট ছেলের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। বড় ছেলে তাঁর খরচের জন্য মাঝেমধ্যেই ছোট ছেলের কাছে বিদেশ থেকে টাকা পাঠান। তাঁদের বাড়ির পেছনে নারকেল ও লেবুর বাগান রয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল রাতের আঁধারে কে বা কারা গাছ থেকে নারকেল ও লেবু পেড়ে নিয়ে যায়। সকালবেলা ছোট ছেলে আজিজুলের স্ত্রী আঁখিনুর বেগম (২২) গাছে ফল না দেখে বড় ছেলের বউ ও তাঁর ছেলেমেয়েকে সন্দেহ করে গালিগালাজ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। আজিজুল, আঁখিনুর বড় বউ জেসমিন ও তাঁর মেয়ে নাজমুন নাহার শিখাকে মারধর করতে থাকলে তাঁদের চিৎকারে তাঁর নাতি জিসান ঘর থেকে বের হয়ে তার মা ও বোনকে ছাড়িয়ে নেয়।

তখন আজিজুলের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কি হতে থাকলে তিনি আজিজুলের পক্ষ নিয়ে উঠানে থাকা ক্রিকেট খেলার কাঠের ব্যাট পেয়ে জিসানের মাথা বরাবর বাড়ি মারলে জিসান তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। আশপাশের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় জিসানকে উদ্ধার করে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে ২৮ এপ্রিল জিসান মৃত্যুবরণ করে।

এ ঘটনায় ভিকটিম জিসানের মা জেসমিন বেগম (৪২) আবুল কাশেম হাওলাদারকে (৬৬) প্রধান আসামি করে এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুলাদী থানায় মামলা হয়।