গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার চার আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার পুলিশ ও জেলা ডিবি
অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

জানা গেছে, লোহাগড়া থানার কাশিপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মো. হাদিউজ্জামানের লোহাগড়া বাজারে মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটের ভিতরে “বিসমিল্লাহ টেলিকম” নামে একটি মোবাইল ফোনের দোকান আছে। তার দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, বাটন মোবাইল ফোন, এবং ফোনের বিভিন্ন ধরনের মালামাল আছে । তিনি প্রতিদিন সকাল অনুমান ৯টা থেকে রাত আনুমানিক ১১টা পর্যন্ত দোকানে থাকেন । গত ২৩ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মোবাইল ফোন বিক্রির ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা দোকানের ড্রয়ারে রেখে দোকান তালাবন্ধ করে বাড়ি চলে যান। পরের দিন ২৪ মে সকাল সাড়ে ৯টার সময় তিনি তার ফোনের দোকানে গেলে দেখেন, দোকানে নতুন তালা। তখন তিনি দ্রুত বিষয়টি লোহাগড়া বাজার কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। বাজারের সভাপতিসহ কমিটির সকল সদস্য বাদীর দোকানে উপস্থিত হন। তাদের সামনে দোকানে লাগানো নতুন তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করলে দেখতে পান, ১৪০টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন অজ্ঞাতনামা চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। যার মূল্য আনুমানিক ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া দোকানের ড্রয়ার ভেঙে ড্রয়ারে থাকা ব্যবসার নগদ অনুমান ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা চুরি করে নেয়। পরবর্তীতে মো. হাদিউজ্জামানের দোকানের পাশের তোয়া টেলিকম দোকানের মালিক জনৈক মো. তোফাজ্জল হোসেনের (৩৩) ফোনের দোকানেও একটি নতুন তালা দেওয়া দেখে লোহাগড়া বাজার কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, জয়েন্ট সেক্রেটারিসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা তার দোকানের নতুন তালা ভেঙে দোকানের ভিতরে যেয়ে দেখে আনুমানিক ৮০/৯০ টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন অজ্ঞাতনামা চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। এসব মোবাইলের মূল্য অনুমান-২ লক্ষ ৮০ হাজারটাকা। এছাড়া ড্রয়ারের তালা ভেঙে ড্রয়ারে থাকা ব্যবসার নগদ ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চুরি করেছে।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২৫ মে মো. হাদিউজ্জামানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে লোহাগড়া থানায় চুরির মামলা রুজু করা হয়।

নড়াইল জেলার পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসানের নির্দেশে চোরাই মালামাল উদ্ধারসহ অজ্ঞাতনামা চোরদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে জেলা পুলিশের একাধিক চৌকস টিম।

গত ২৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ইনচার্জ মো. শাহ্ দারা খানের তত্ত্বাবধানে এসআই (নিঃ) মো. ফিরোজ আহম্মেদ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং লোহাগড়া বাজারে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করেন।

পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসানের নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) তারেক আল মেহেদীর তত্ত্বাবধানে লোহাগড়া থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখার যৌথ টিম অভিযান পরিচালনা করে প্রথমে আসামি কামাল হোসেনকে কুমিল্লা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন চাপিতলা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে এবং তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে পুলিশি অভিযান পরিচালনা করে আসামি মো. রফিক মোল্যাকে একই গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে । উপরোক্ত দুই জনের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে আসামি‌ সেলিম মিয়াকে তার নিজ বাড়ি নিয়ামতপুর, মুরাদনগর, কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধৃত ১নং আসামি মো. রফিক মোল্যার হেফাজত হতে চুরি যাওয়া ১টি মোবাইল ফোন এবং তার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে অভিযান পরিচালনা করে ২নং আসামি সেলিম মিয়ার কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন এবং তাদের দুই জনের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ৩ নং আসামি কামাল হোসেনের কাছ থেকে চুরি যাওয়া মোবাইলে ব্যবহৃত সিম নং-০১৮৪০৩০৫৯১৭ উদ্ধার করা হয়। ধৃত আসামিদের আদালতে পাঠানো হলে ধৃত আসামি মো. রফিক মোল্যা নিজের দোষ স্বীকার করেন এবং অন্যান্য আসামিদের নাম উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই(নিঃ) এস এম হাসিবুর রহমান ধৃত আসামিদের জবানবন্দি ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চুরির ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং চুরির ঘটনায় জড়িত আসামি মোঃ সালাউদ্দিন (২৩), পিং-মৃত রফিকুল ইসলাম, সাং-মছাঘোড়া, থানা-মুরাদনগর, জেলা-কুমিল্লাকে শোন অ্যারেস্ট দেখান। আসামি মোঃ সালাউদ্দিন খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা থানার একটি চুরির মামলায় আটক ছিল। উক্ত আসামিকে ২৭/০৭/২৪ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার দোষ স্বীকার করে এবং ২৮/০৭/২৪ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃত আসামিগণ আন্তঃজেলা চোর দলের সক্রিয় সদস্য। ধৃত আসামিগণ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন থানা ও জেলায় কাটার দিয়ে দোকান কেটে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল চুরি করে থাকে। চোরাই মালামাল উদ্ধার ও অন্যান্য চোরদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।