শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে রাজধানীর প্রতিটি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান পিপিএম, এনডিসি।
শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ডিএমপির নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি কথা বলেন।
ডিএমপির পক্ষ থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান। সারা দেশের মানুষ এর আনন্দ উপভোগ করে। এ বছর দক্ষিণ সিটিতে ১৩১টি ও উত্তর সিটিতে ১২২টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে যাতে করে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি যথাযথ মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হতে পারে, এ জন্য বিভিন্ন ধাপে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজামণ্ডপের নিরাপত্তাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রতিটি পূজামণ্ডপে স্থায়ী পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি থানা-পুলিশের নিজস্ব অধিক্ষেত্রে টহল ও চেকপোস্ট ব্যবস্থা এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা ও মেটাল ডিটেকটরের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আয়োজকদের মধ্যে থেকে প্রতিটি পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ থাকবে। অগ্নিনির্বাপণ ও বিদ্যুৎব্যবস্থা সচল রাখার পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার বাহিনীও দায়িত্ব পালন করবে। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং র্যাব তাদের টহল কার্যক্রম ও অন্যান্য নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পূজার দিনগুলোতে আগত ভক্তদের চেকপোস্টে কর্মরত পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করার অনুরোধ করেন তিনি।
পূজায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পূজার দিনগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। তবে পুরান ঢাকার রাস্তা সরু হওয়ার কারণে সেখানে যান চলাচলে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। এ জন্য আমরা পূজা উদযাপন কমিটিকে অনুরোধ করেছি, পূজা মণ্ডপের কাছাকাছি যেন কোনো মেলা বা জনসমাবেশ না হয়।
তিনি বলেন, ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হবে। এ জন্য পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী, ওয়াইজঘাট, ডেমরা ও শীতলক্ষ্যা নদীসহ ১৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রাতেও পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এ জন্য নৌ পুলিশ ফায়ার ব্রিগেডসহ অন্যান্যরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমেও সেবা গ্রহণ করা যাবে।
বিসর্জনের সব কার্যক্রম সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সম্পাদনের অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পূজামণ্ডপ, বিসর্জন শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের সময় সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে পটকা ও আতশবাজির ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান তিনি। বিসর্জন শোভাযাত্রায় উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম না ব্যবহার করারও অনুরোধ করেন তিনি। যাঁরা সাঁতার জানেন না, তাঁদের পানিতে না নামার অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, এ বছর পূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ও বিঘ্ন ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য তিনি সমাজের সব স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
এর আগে উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অংশ হিসেবে ডিএমপির সিটিটিসির সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও কে-নাইন টিম মহড়া প্রদর্শন করে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান পিপিএম (বার); অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী; ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ; পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।