মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, থানাকে জনগণের আস্থার জায়গায় পরিণত করতে হবে। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে যেকোনো সমস্যায় থানায় যেতে পারেন এবং উপযুক্ত সেবা পান, সে জন্য থানার পরিবেশ ও কার্যক্রম সেভাবে রূপান্তর করতে হবে। থানায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। জনবান্ধব পুলিশ গড়ে তুলতে থানার কার্যক্রম আরও সক্রিয় ও যুগোপযোগী করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যানজট নিরসনসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার করতে হবে। এরই মধ্যে রাজধানীতে ৭০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির যেসব অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আগ্রহীদের বয়সসীমা বেঁধে দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগানোর চিন্তাভাবনা চলছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি মহানগরীর যানজট নিরসনে সভা-সমাবেশের জন্য মুক্তাঙ্গন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সভা-সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহানগরীর জন্য মুক্তাঙ্গন ঠিক করে দিতে হবে, যাতে যানজট হ্রাস পায়। মেট্রোপলিটন এলাকায় অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেন তিনি।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আদালতের রায়ে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন পেয়েছেন। এসব অপরাধী পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হলে তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার ও বিভিন্ন সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে হয়তো সেটা জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী খুব সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। তিনি এ সময় পুলিশকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন ও প্রটোকল ডিউটি কমিয়ে আনার নির্দেশ দেন।
মতবিনিময় সভা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে উপদেষ্টা বলেন, মিডিয়াকে সত্য ঘটনা প্রচার করতে হবে। আমাদের দেশের মিডিয়ার যে একটা সুনাম আছে, পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়ার তা নেই। তারা মিথ্যাই কিন্তু প্রচার করে সবচেয়ে বেশি। আর এই মিথ্যাটাকে কিন্তু কাউন্টার করতে পারেন শুধু আপনারা।
পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ওই জাহাজ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে একটি দেশে গেছে। আবার ওই দেশ থেকে আমাদের দেশে এসেছে। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, আমাদের দেশে কি কোনো দেশের জাহাজ আসা নিষেধ। তিনি বলেন, অনুমতি সাপেক্ষে যেকোনো দেশের জাহাজ আমাদের দেশে আসতে পারে। জাহাজটি রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে খেজুর, পেঁয়াজ নিয়ে এসেছে। এতে কেন আমরা বাধা দেব। দেশের স্বার্থ বিঘ্নকারী এসব গুজব যাঁরা রটাচ্ছেন, তাঁরা দেশের শত্রু।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ মো. ময়নুল ইসলাম এনডিসি, র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম প্রমুখ।
সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কার্যক্রম সম্পর্কে ব্রিফ করেন অতিরিক্ত কমিশনার হুমায়ূন কবীর চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের কার্যক্রম সম্পর্কে ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার (অপারেশনস) নেছার উদ্দিন আহমেদ।
