মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জীবনমুখী ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একটি চলচ্চিত্র ব্যক্তির জীবন যেমন পরিবর্তন করতে পারে, তেমনি একটি সমাজকেও বদলে দিতে পারে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা লক্ষ করবেন জীবনধর্মী চলচ্চিত্র যখন নির্মাণ করা হয়, সেগুলো কিন্তু মানুষকে সব থেকে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ, মানুষ তার জীবনের প্রতিচ্ছবিটা সেখান থেকে পায়। আবার একটা সিনেমা পারে মানুষের জীবন পাল্টে দিতে বা সমাজের চিত্রটা পাল্টে দিতে।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।
জীবনধর্মী সৃষ্টির গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিনেমা, নাটক সবক্ষেত্রেই অবদান রাখে, মানুষের চিন্তাচেতনার আরও উৎকর্ষ ঘটাতে পারে এবং মানুষকে অন্যায়-অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে। তিনি বলেন, যাঁরা আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিক, যাঁরা সাহিত্য রচনা করেন এবং যাঁদের রচনার ওপর ভিত্তি করেই সিনেমা হয়, তাঁরাও যদি এ রকম জীবনধর্মী রচনা তৈরি করেন, নাটক তৈরি করেন বা সাহিত্য তৈরি করেন আর তার ওপর ভিত্তি করে যদি সিনেমাগুলো হয়, সেটা আমাদের সমাজটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, যেভাবে তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, উন্নত করতে চাচ্ছে, মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চাচ্ছে, মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে- সেই সুযোগটা এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২১ এর ৩৪টি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন। মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর বক্তব্য দেন।
চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় এ বছর যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যৌথভাবে লাল মোরগের ঝুঁটি ও নোনাজলের কাব্য, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ধর’, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র কাওসার চৌধুরীর (বধ্যভূমিতে একদিন), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য) পুরস্কার লাভ করেছে। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও কৈশোরের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে চিত্রায়িত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রটি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ সম্মাননা লাভ করে।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে যৌথভাবে মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল); শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য); পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ) এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে মো. আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি) পুরস্কার লাভ করেছে।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়) পুরস্কার লাভ করেছে।
গানের জগতে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ গায়ক কে. এম. আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ) পুরস্কার লাভ করেছে।
এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক দলগত-সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)। শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান দলগত- মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি) পুরস্কার লাভ করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তিনি নিজেও আগামী বাজেটে উদ্যোগ নেবেন এই অনুদানটা বাড়িয়ে দেওয়ার। কেননা বরাদ্দ ভালো থাকলে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার মাঝে মেধা আছে, চিন্তাশক্তি আছে এবং শৈল্পিক মনোভাবটা আছে।’