জলপথের অদম্য প্রহরী নৌ পুলিশ। ছবি: পুলিশ নিউজ

প্রাচীন মানবসভ্যতার মতো নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের মানবসভ্যতা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও নৌপথের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ২০১৩ সাল থেকে অভিযান চালিয়ে আসছে নৌ পুলিশ। প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত নদীতে প্রচুর জাটকা পাওয়া যায়। নির্বিচার জাটকা নিধন বন্ধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এ সময় জাটকা ধরা নিষিদ্ধ।
বিশেষ করে চাঁদপুর ও বরিশালের পাঁচটি অভয়ারণ্যে জাটকাসহ সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে নৌ পুলিশ জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ৪ কোটি ৬৪ লাখ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করেছে, যার আনুমানিক দাম ১১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে এসব জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এ সময় ১১ হাজার ৭৭১ কেজি জাটকা জব্দ করেছে নৌ পুলিশ, যার আনুমানিক দাম ৩৬ লাখ টাকা। এসব জাটকা অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া ১০৯ জনের বিরুদ্ধে ৫৮টি মামলা দায়ের ও ৪৮টি নৌকা/ট্রলার জব্দ করেছে নৌ পুলিশ।

নৌপথের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নেতৃত্ব দিচ্ছে নৌ পুলিশ। ছবি: পুলিশ নিউজ

সম্প্রতি চাঁদপুরের ষাটনলে এক নৌ র‌্যালি এবং মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নৌ পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজি মো. শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম। সেখানে তিনি দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মৎস্যজীবী সংগঠন ও জেলে সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারঘোষিত সময়ে জাটকা নিধন না করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এ ছাড়া মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ঢাকা অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
নৌ পুলিশের হেফাজতে অবৈধ জাল। ছবি: পুলিশ নিউজ

নৌ পুলিশের সাফল্য
নৌপথের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নৌ পুলিশ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। রাতে বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করার লক্ষ্যে ১ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ১০৬টি বাল্কহেড জব্দ করা হয় এবং ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন নৌযান থেকে তেল চুরি ঠেকাতে নৌ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ দিনে ৪ হাজার ৬১০ লিটার চোরাই তেল উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক দাম ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
নৌ পুলিশের হেফাজতে অবৈধ জাটকা। ছবি: পুলিশ নিউজ

নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করলে যেমন পরিবেশ দূষিত হয়, ঠিক তেমনই মৎস্যসম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। বানা বা ঝোপ নদীর প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সব জলজ প্রজাতির জন্যও একধরনের হুমকি। ১ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ১৩৩টি বানা বা ঝোপ অপসারণের পর ধ্বংস করেছে নৌ পুলিশ।

নৌপথ ব্যবহার করে মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে নৌ পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় নৌপথে পাচারের সময় প্রায় ২২ কেজি গাঁজা জব্দ করেছে নৌ পুলিশ।

মাছ ধরার ট্রলার জব্দ করছে নৌ পুলিশ। ছবি: পুলিশ নিউজ

নৌপথে সংঘটিত বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সম্প্রতি একটি বিশেষ মনিটরিং সেল স্থাপন করা হয়েছে।

নৌপথে বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে নৌ পুলিশ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যবহৃত বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদান এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নৌপথে যাতায়াতের জন্যও নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে নৌ পুলিশ।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন নৌ পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজি মো. শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি: পুলিশ নিউজ

নৌ পুলিশ প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্ণতা পাবে। জনগণের সচেতনতা ও নৌ পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমেই একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠন করা সম্ভব হবে। স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
চাঁদপুরের ষাটনলে এক নৌ র‌্যালি এবং মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নৌ পুলিশ প্রধান। ছবি: পুলিশ নিউজ