
ট্রাফিক শৃঙ্খলা কাঙ্ক্ষিত মানে নিয়ে আসার জন্য নগরে বসবাসকারী জনসাধারণকে সচেতন এবং সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নয়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এনডিসি, পিএসসি।
সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আয়োজিত ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাজধানী ঢাকার জনবসতির ঘনত্ব অত্যধিক। বর্তমানে প্রায় ২ কোটিরও বেশি লোক এই শহরে বসবাস করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো বৃদ্ধি পেলেও পরিবহন ব্যবস্থার শৃঙ্খলা এবং আধুনিকায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে হয়নি। পাশাপাশি একই সড়কে রিকশাসহ অসংখ্য অযান্ত্রিক যানবাহনও চলে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে সুশৃঙ্খল ও কাঠামোবদ্ধ ট্রাফিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা কঠিন হচ্ছে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতা, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন তাঁদের কায়িক শ্রম ও মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ট্রাফিক বিভাগ বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া করেছে। ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ে একটি গবেষক দল কাজ করছে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। শুধু সরকার কিংবা পুলিশের পক্ষে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার আশানুরূপ উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন নগরে বসবাসকারী সবার অংশগ্রহণ। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন গাড়িচালক ও ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি নগরবাসীকেও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ সোমবার (২১ অক্টোবর) থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর ফলে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক বিভাগের কাজে যেমন গতিশীলতা আসবে, তেমনি ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনভোগান্তি অনেক কমে আসবে।
পরে বেলুন উড়িয়ে ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪-এর উদ্বোধন ঘোষণা এবং ট্রাফিক পক্ষের সাফল্য কামনা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর আগে তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ফোর্সের ব্যারাক ও মেস পরিদর্শন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে দেশ এক ধরনের প্রশাসনবিহীন ছিল। সে সময় আপনারা দেখেছেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ছাত্ররা কিভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারুণ্যের শক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকার কাজে লাগাতে চায়। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে সড়কে শৃঙ্খলা ও সচেতনতার অভাব। দুর্ঘটনা রোধে আমাদের সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক পক্ষের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ও সচেতনতা বাড়িয়ে নগরীর যানজট নিরসন করতে সক্ষম হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ এনডিসি, পিএসসি বলেন, আপনারা জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন দেয়ালে অনেক গ্রাফিতি ও লিখন দেখেছেন। আমরা নতুন মানুষ দেখতে পাচ্ছি কিন্তু নতুনত্ব দেখতে পাচ্ছি না। মানুষ চায় পরিবর্তন, মানুষ চায় সেবা। মানুষ ট্রাফিকের কাছ থেকে গতানুগতিক যে সেবা পেয়ে আসছে, এর পরিবর্তন চায় মানুষ। মানুষ নিরাপদ সড়ক ও যানজটমুক্ত শহর চায়।
তিনি বলেন, আমরা গতানুগতিক ট্রাফিক পক্ষ চাই না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪-এর মাধ্যমে মানুষ নতুন একটা কিছু দেখতে পারবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান পিপিএম, এনডিসি বলেন, ঢাকা মহানগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন এই সমস্যার সম্মুখীন হয়। ডিএমপি রাত-দিন পরিশ্রম করে যান চলাচলকে স্বাভাবিক রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় এই সমস্যা সমাধানে একদিকে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা ও কার্যকরী উদ্যোগ এবং অন্যদিকে প্রয়োজন নগরবাসীর সহযোগিতা, সচেতনতা ও সতর্কতা।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সময় রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল না, সে সময় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, স্কাউটস ও বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ঢাকা শহরসহ সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। তাঁদের এই সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ট্রাফিক পক্ষ চলাকালে নগরবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জনবহুল এলাকা যেমন বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল ও মার্কেটে ট্রাফিক সম্পর্কিত যেকোনো সেবা সহজ করা হবে।
চালক ও মালিকদের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মতবিনিময় সভা ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আটটি ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্ট এলাকায় সচেতনতামূলক সভা ও কর্মসূচির আয়োজন করবে। এই ট্রাফিক সেবা সপ্তাহে ছাত্র-জনতাসহ সব পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে উন্নত করতে একসাথে কাজ করবে ডিএমপি। এ লক্ষ্যে প্রতিদিন ঢাকা মহানগরে স্কাউটসহ এক হাজার স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আয়োজিত ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।
ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ মো. ময়নুল ইসলাম এনডিসি। এ ছাড়া ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।