গ্রেপ্তার মলম পার্টির সদস্যরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় মলম পার্টির ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি আভিযানিক দল। জব্দ করা হয়েছে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জে এই মলম পার্টি চক্র অটোরিকশা ব্যবহার করে ছিনতাই করে আসছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ, চুনকুটিয়া, কদমতলী, আব্দুল্লাপুর, আটিবাজার, রুহিতপুর ও রামেরবান্দা এলাকায় যাত্রীবেশে অটোরিকশায় ওত পেতে বসে থাকত। তারপর যেসব যাত্রীকে দেখে ভালো টাকাপয়সা আছে বলে মনে হতো, তাদের অটোরিকশাতে তুলে নিত। কিছুদূর যাওয়ার পর চালক অটোরিকশাটি থামাত। তখন যাত্রীবেশে বসে থাকা মলম পার্টির সদস্যদের একজন সামনে থেকে পেছনে এসে বসত। তারপর অটোরিকশা চলা শুরু হলে মলম পার্টির সদস্যরা পেছনের সিটে মাঝখানে বসে থাকা নিরীহ যাত্রীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে মারধর শুরু করে দিত। তারা প্রথমে ভুক্তভোগী যাত্রীর কাছে থাকা টাকাপয়সা, বিকাশ-নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা, স্বর্ণালংকার, ঘড়ি ইত্যাদি ছিনিয়ে নিত, তারপর ভুক্তভোগী যাত্রীর মোবাইল ফোন দিয়ে তার আত্মীয়দের ফোন করে বিকাশ/নগদে মুক্তিপণের টাকা দাবি করত; অন্যথায় জিম্মি যাত্রীকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিত। তখন ভুক্তভোগী যাত্রীর আত্মীয়স্বজন যাত্রীর চিৎকার ও কান্না শুনে যেভাবে সম্ভব টাকা জোগাড় করে বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্টে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিত। তারপর মলম পার্টির কিছু সদস্য যাত্রীকে নিয়ে অটোরিকশায় বসে থাকত এবং অপর সদস্যরা যাত্রীর মোবাইল নিয়ে সরাসরি বিকাশ/নগদ এজেন্টের দোকান থেকে টাকা ক্যাশআউট করে নিত। এরপর মলম পার্টির সদস্যরা ভুক্তভোগী যাত্রীর চোখে মলম লাগিয়ে তাকে নির্জন কোনো এক জায়গায় সুযোগ বুঝে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত। এভাবে সংঘবদ্ধ এই মলম পার্টির সদস্যরা দিনের পর দিন একাধিক যাত্রীকে মারধর করে সর্বস্ব লুটে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একাধিক ছিনতাইয়ের মামলা হয়।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ধর্ষ এই মলম পার্টির সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য ঢাকার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বিপিএম পিপিএম নির্দেশ দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএমের সরাসরি নির্দেশনা ও তত্বাবধানে আরাফাত হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি-দক্ষিণ) এর নেতৃত্বে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে গঠিত একটি আভিযানিক দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কেরানীগঞ্জ, দোহার, ডিএমপির বিভিন্ন এলাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ এই মলম পার্টির ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলো রাসেল ওরফে বড় মিয়া, নাজমুল হুদা, রমজান, ভাগিনা জামাল ওরফে নাঈম, পিন্টু ওরফে নিলয় ও আমিনুল।

পরে আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ২ টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়। রাসেল ওরফে বড় মিয়া সংঘবদ্ধ এই মলম পার্টির সর্দার। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার মলম পার্টির সদস্যদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক দস্যুতার মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।