দিনাজপুর সদর উপজেলার ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি এটিএম বুথ থেকে চুরি হওয়া ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করেছে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ। গতকাল রোববার সন্ধ্যা থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ চুরি হওয়া টাকা উদ্ধার করে।
এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি ফাস্ট ট্র্যাক বুথের সিডিএম মেশিনের কিছু অংশ ভেঙে টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। খবর প্রথম আলোর।
কোতোয়ালি থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চুরির ঘটনার পরদিন গত শনিবার ওই ব্যাংকের দিনাজপুর শাখার ব্যবস্থাপক অপূর্ব রায় চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের সূত্র ধরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিনের নেতৃত্বে কোতোয়ালি থানার একটি প্রতিনিধিদল তদন্ত শুরু করে। এরপর গতকাল দুপুরে সন্দেহভাজন হিসেবে ওই ফাস্ট ট্র্যাক বুথের জুনিয়র চ্যানেল অফিসার বরকত জামান ও বিকাশের স্থানীয় এজেন্ট রেজাউল ইসলামকে আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুই ব্যক্তি পুলিশের কাছে টাকা চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন।
অভিযুক্ত বরকত জামান পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বাগপুর গ্রামের মৃত তবিজুল ইসলামের ছেলে। আরেক অভিযুক্ত রেজাউল ইসলাম দিনাজপুর সদর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে।
দিনাজপুর জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক বুথ থেকে গ্রাহকদের জমা দেওয়া টাকা উত্তোলন করে অরনেড নামের তৃতীয় পক্ষের একটি প্রতিষ্ঠান। টাকা উত্তোলনের সময় বুথের ব্যবস্থাপক ও অরনেডের কর্মকর্তারা পৃথক গোপন নম্বর ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করেন। বরকত জামান কয়েক বছর ধরে ওই বুথে চাকরি করছেন। এক বছর ধরেই তিনি সিডিএম মেশিন থেকে টাকা চুরির পরিকল্পনা করে আসছিলেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছয় মাস আগে তিনি বিকাশের স্থানীয় এক এজেন্ট রেজাউলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সপ্তাহখানেক আগে রেজাউলকে অরনেড নামের ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেন বরকত। তবে তিন দিন কাজ করে বেতন কমের অজুহাত দিয়ে রেজাউল চাকরি ছাড়েন।
শুক্রবার রাত আটটার দিকে বুথে দ্বিতীয় শিফটে দায়িত্বে আসেন প্রহরী রাশেদ ইকবাল। এ সময় বরকত কৌশলে রাশেদকে দিয়ে নাশতা আনতে পাঠান। এই সুযোগে প্রহরী রাশেদের টিফিন ক্যারিয়ারে রাখা ভাতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেন বরকত। পরে নাশতা খেয়ে বরকত অফিস থেকে বের হয়ে যান। রাত ১০টায় রেজাউলকে নিয়ে বরকত আবার বুথে ফিরে আসেন। এ সময় প্রহরী রাশেদ ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রেজাউল ও বরকত প্রথমে বুথের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও রেকর্ডিং যন্ত্রটি (ডিভিআর) সরিয়ে ফেলেন। পরে তাঁরা দুজন মিলে সিডিএম মেশিন থেকে ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা চুরি করে পালিয়ে যান।
জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত দুজন বলেন, টাকা চুরির পর সিসিটিভি ক্যামেরা ডিভিআরটি তাঁরা শহরের মাতাসাগর এলাকায় পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেন। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ ভাঙা অবস্থায় ডিভিআরটি উদ্ধার করেছে। দুজনের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি টাকা বরকত ব্যাংকে জমা রেখেছেন। ব্যাংকে টাকা জমার ওই রসিদও উদ্ধার করেছে পুলিশ।