মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা এই নেতা তালেবান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। ফাইল ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের মন্ত্রিসভা ঘোষণা করা হতে পারে আজ শুক্রবার। তালেবানের পক্ষ থেকে মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেওয়ার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা না করা হলেও বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আজ পবিত্র জুমার নামাজের পর পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার ঘোষণা দিতে পারে তালেবান। আগেই অবশ্য চারজন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে তারা। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভায় কারা থাকতে পারেন, তাঁদের সম্ভাব্য কয়েকটি নামও আসছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। গতকাল বৃহস্পতিবার তালেবানের পক্ষ থেকে শুধু জানানো হয়েছে, সরকার গঠনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খবর প্রথম আলোর।

তালেবান বাহিনী গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে নেয়। এর মধ্য দিয়ে পানশির উপত্যকা বাদে পুরো আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাদের। এর মধ্য দিয়ে প্রায় দুই দশক পর আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এল তালেবান।
তালেবানের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আজ পবিত্র জুমার নামাজের পর পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার ঘোষণা আসতে পারে। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, সরকার ঘোষণা নিয়ে তালেবানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এখনো মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। সংগঠনটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ রয়টার্সকে বলেছেন, সরকার ঘোষণার দিনক্ষণ তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারবেন না। তবে এটা মাত্র কয়েক দিনের বিষয়। এদিকে তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা আহমাদুল্লাহ মুত্তাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে জমকালো অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

তালেবানের সরকার কেমন হবে, তার অবশ্য একটি ধারণা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এসেছে। সংগঠনটির সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার হাতেই থাকবে সর্বময় ক্ষমতা। তাঁর অধীনে কাজ করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তবে তালেবান জানিয়েছে, তিনি এখন কান্দাহারে আছেন। গত বুধবার কান্দাহারে তালেবানের সশস্ত্র কুচকাওয়াজে তাঁর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি হাজির হননি। ওই কুচকাওয়াজে আফগান বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মার্কিন সাঁজোয়া যানসহ অনেক সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়।

তালেবানের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন আখুন্দজাদার তিন ডেপুটি। তাঁদের একজন মোল্লা ইয়াকুব। তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে। মোল্লা ইয়াকুব বর্তমানে তালেবানের সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। আরেক ডেপুটি সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকেও মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে আছেন তিনি। এ ছাড়া তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন।

আর আগেই ঘোষিত চার মন্ত্রী হলেন অর্থমন্ত্রী গুল আগা, ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সদর ইব্রাহিম, ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা আবদুল কাইয়ুম জাকির ও ভারপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি।

তালেবান ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করবে। আফগানিস্তানের জনগণসহ সারা বিশ্বের নজর এখন তালেবানের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার কেমন হয়, সেদিকে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকার যেমনই হোক, নতুন এই সরকারের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে অর্থসংকট প্রকট হতে শুরু করেছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে এটিএম বুথের সামনে মানুষজনের সারি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও সংবাদ হয়েছে।