ঢাকার আদালত চত্বর থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের অভিযোগে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য ও ছিনতাইয়ের প্রধান সমন্বয়ক এবং তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।
শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার) জানান, শুক্রবার (৭ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা ও হুসনা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, গত ২০ নভেম্বর সিএমএম কোর্টের মূল ফটক থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যকে ছিনতাই করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা ও হুসনা আক্তার জানান, পরিকল্পিতভাবে আনসার আল ইসলামের সদস্যকে ছিনতাই করা হয়। ছিনতাইয়ের কাজে কোন রাস্তা ব্যবহার করা হবে, ছিনতাই শেষে কোথায় মিলিত হবেন, ব্যর্থ হলে করণীয় নিয়ে আগেই পরিকল্পনা করেন তাঁরা। কাশিমপুর কারাগার ও আদালতে জঙ্গিদের সঙ্গে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। এক পর্যায়ে তাঁর ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন। পরবর্তী সময়ে সাইমনের মধ্যস্থতায় আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে শিখার বিয়ে হয়। সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর আরও গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শিখা। ২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিত রায়, দিপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলার আসামি আবু সিদ্দিক সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে কারাবন্দী সোহেলসহ সংগঠনের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন শিখা।
তিনি আরও বলেন, আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাই করা হয়। শিখা এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। পরিচয় গোপন করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলায় একাধিক বাসা ভাড়া নেন। সেখানে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান ও শিখা তাঁদের সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করতেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার প্রায় ৬ মাস আগে থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিএমএম কোর্টে হাজিরা দেওয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসেবে শিখাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘটনার দিন তিনি সিএমএম কোর্ট এলাকায় পৌঁছে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মানসহ আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশ নেন।
কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুই আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।