সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফেলে আসা টাকা উদ্ধারের পর তা তার মালিক সত্যজিৎ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৫ জানুয়ারি গরু ব্যবসায়ী আবদুল মুনির চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ সুগন্ধা আবাসিক এলাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ফতেয়াবাদ যান। অটোরিকশা থেকে নেমে যাওয়ার খানেকটা সময় পর তিনি খেয়াল করেন, তাঁর মানিব্যাগটি সঙ্গে নেই।

মানিব্যাগে ১২ হাজার টাকা, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মুনির। তাঁর মনে হয়, সম্ভবত তিনি মানিব্যাগটি অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফেলে আসা ব্যাগ অ্যাপের মাধ্যমে উদ্ধার করে যাত্রী রহিম উল্লাহকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

একপর্যায়ে পরিচিত একজনের মাধ্যমে মুনির জানতে পারেন, নগরে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা অ্যাপের মাধ্যমে সহজে শনাক্ত করা যায়। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় অটোরিকশাটি শনাক্ত করে নগর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সৈকত নাথকে দেন তিনি। তৎক্ষণাৎ ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ নামের অ্যাপ ব্যবহার করে অটোরিকশাটির চালকের তথ্য নেওয়া হয়।

চালক জানান, মুনির নেমে যাওয়ার পর তাঁর অটোরিকশায় দুজন যাত্রী উঠেছিলেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরের খুলশী এলাকায় ওই দুই লোককে শনাক্ত করা হয়। তাঁরা জানান, অটোরিকশায় একটি মানিব্যাগ পেয়েছেন। পরে মানিব্যাগটি উদ্ধার করে মুনিরের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

৩. সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফেলে আসা ল্যাপটপ ফিরে পেয়েছেন আলমগীর মাহমুদ চৌধুরীছবি: সংগৃহীত

মানিব্যাগ ফিরে পেয়ে বেশ খুশি মুনির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানিব্যাগ ফিরে পাব, ভাবতেই পারিনি। এখন তা ফিরে পেয়ে অসম্ভব ভালো লাগছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

চট্টগ্রাম নগরে মুনিরের মতো যেসব যাত্রী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভুলে নিজেদের মালামাল বা জিনিসপত্র ফেলে যান, তাঁদের তা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে নগর ট্রাফিক পুলিশের ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপ। খবর প্রথম আলোর।

চালুর চার মাসের মধ্যে বেশ কয়েকজন যাত্রী এই অ্যাপের সহায়তায় তাঁদের ভুল করে ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র ফেরত পেয়েছেন।
অ্যাপটি সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা বাড়লে, তা যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের নিরাপত্তায় নতুন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ নামের অ্যাপটি উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার নম্বর যাত্রীর জানা থাকলে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপ ব্যবহার করে কম সময়ের মধ্যে গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আগে গাড়ির নম্বর পাওয়া গেলেও বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে ছুটতে হতো। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপারও। তাই এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠার সময় এর নম্বর সংগ্রহে রাখতে যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের নিরাপত্তায় নতুন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক পুলিশ জানায়, অ্যাপটির জন্য তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও তার মালিক-চালকের নানা তথ্য সংগ্রহ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, গাড়ির নিবন্ধন সনদ, ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট, ড্রাইভিং সনদ ইত্যাদি তথ্য। পরে এসব তথ্য সার্ভারে জমা রাখা হয়। প্রত্যেকের জন্য আলাদা একটি কিউআর কোড ও আইডি দেওয়া হয়, যা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ঝোলানো থাকে। যাত্রীরা এই আইডি বা কিউআর কোড স্ক্যান করে অটোরিকশার চালক ও মালিক সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবেন। অটোরিকশাটি নগর পুলিশের ভ্যারিফাই কি না, তা–ও যাত্রীরা বুঝতে পারবেন।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, তারা ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম নগরে ২১ হাজার ৪৮৭ সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপে যুক্ত রয়েছেন ১৭ হাজার ৬৭৫ জন মালিক ও চালক।

নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় ৫ এপ্রিল ১০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে ৭টিতে কিউআর কোড ও পরিচয়পত্র লাগানো দেখা যায়। বাকি তিনটি দেখা যায়নি। এই তিনটির মধ্যে দুটির চালক জানান, তাঁরা যাবতীয় তথ্য দিয়েছেন। অন্যটির চালক জানান, তিনি অ্যাপটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। তবে কয়েকজনের কাছে শুনেছেন।

চট্টগ্রাম অটোরিকশা, অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যেসব চালক-মালিক অ্যাপের বাইরে রয়েছেন, তাঁদের সেখানে যুক্ত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

পেশায় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি রহিম উল্লাহ গত ৪ ফেব্রুয়ারি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নগরের অক্সিজেন মোড় থেকে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে যান। তিনি ভুলবশত তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগটি অটোরিকশায় ফেলে চলে যান। বিষয়টি তিনি নগর ট্রাফিক পুলিশকে জানান। ব্যাগটি উদ্ধার করে পরদিন তা তাঁর হাতে তুলে দেয় নগর ট্রাফিক পুলিশ।


গত বছরের ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ নামের অ্যাপটি চালু করা হয়

এ ঘটনা সম্পর্কে নগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, যে অটোরিকশাটিতে রহিম ব্যাগটি ফেলে গিয়েছিলেন, সেটির নম্বর জানতেন না তিনি। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অটোরিকশাটি শনাক্ত করা হয়। পরে দেখা যায়, অটোরিকশাটি নগর ট্রাফিক পুলিশের ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপে যুক্ত রয়েছে। চালককে ফোন করা হলে তিনি ব্যাগটি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এভাবেই রহিমের ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়।