অস্ট্রেলীয় নাগরিক রেহেনা পারভিনকে (৩৭) অপহরণের পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ননদ ও চাচা শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তাঁরা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) নরসিংদী ও মানিকগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন নিহতের ননদ পাপিয়া আক্তার (৩৬) ও চাচা শ্বশুর আমজাদ হোসেন (৬৪)। তবে প্রধান আসামি নিহতের স্বামী আওলাদ হোসেন (৪৭) ও তাঁর সহযোগী মাকসুদা বেগমকে (৪৪) গ্রেপ্তার করা যায়নি।
পুলিশ সুপার জানান, ভুক্তভোগী রেহেনা পারভিন অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। ২০ বছর আগে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানাধীন ছোট রাজপাড়া এলাকার আওলাদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের এক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পান। তাঁদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
তিনি জানান, তবে এই দম্পতির মধ্যে কলহ লেগেই থাকত। সম্প্রতি রেহেনা বাংলাদেশে নিজের নামে জমি কিনে বাড়ি বানালে কলহ আরও বাড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন বড় মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন রেহেনা। এর জেরে গত ২৯ জুন বাংলাদেশে রেহেনার সঙ্গে পুনরায় বিবাদে জড়ান আওলাদ। এক পর্যায়ে রেহেনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আওলাদ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৩ জুলাই অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রেহেনাকে নবাবগঞ্জ থেকে অপহরণ করে আওলাদের বোন পাপিয়ার আশুলিয়ার বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। এরপর গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান আওলাদ।
পুলিশ সুপার জানান, রেহেনা নিখোঁজের ঘটনায় গত ৩১ আগস্ট নবাবগঞ্জ থানায় জিডি করেন তাঁর মা। এ ছাড়া রেহেনাকে উদ্ধারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বার্তা পাঠায় অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন ও পুলিশ। এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর চার আসামির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন রেহেনার মা। তদন্তের এক পর্যায়ে নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ থেকে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়া থানাধীন নয়ারহাট মৌনদিয়া চৌরাপাড়ায় পাপিয়ার বাড়ির মাটি খুঁড়ে রেহেনার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ পুলিশ ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।